আজকে আমরা আলোচনা করব দশম শ্রেণীর ইতিহাসের মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে Part-3

(১) হিন্দু মেলা টীকা লেখো ?
উত্তর:-
সূচনা- ভারতীয় জাতীয় জাগরণে বাংলার কয়েকটি সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল যার মধ্যে নবগােপাল মিত্রের চৈত্র মেলা যার পরে নাম হয় হিন্দু মেলা ছিল অন্যতম। 1867 খ্রিস্টাব্দে রাজনারায়ণ বসু, নবগােপাল মিত্র এটি গঠন করেন এবং এর স্থায়িত্ব ছিল প্রায় 13 বছর।
উদ্দেশ্য:-
হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য গুলি হল:
1. দেশীয় ভাষা চর্চা করা।
2 স্বদেশী ভাবধারায় দেশবাসীকে উদন্ধ করা ।
3. হিন্দু জাতিকে জাতীয়তা আদর্শে ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্য গড়ে তােলা।
4. এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার করা।
5. জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে মর্যাদা দেওয়া।
6. সাধারণ মানুষের মধ্যে হিন্দু ধর্মের অতীত গৌরব গাঁথা ছড়িয়ে দেওয়া।
কর্মসূচি:
এই সংগঠনের কর্মসূচির আওতায় ছিল লাঠি, লেয়ার খেলা, প্রদর্শনী, দেশাত্মবোধক সংগীত, বক্তৃতা প্রভৃতি। এই সকল কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটানাের চেষ্টা করা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
এর বৈশিষ্ট্য গুলি হল
1. এই প্রতিষ্ঠানটি এর সকল সদস্যই ছিল হিন্দু। 2. এই মেলায় স্বরচিত কবিতা, সংগীত পরিবেশিত হতাে। উদাহরণস্বরূপ 14 বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার হিন্দু মেলার উপহার কবিতা টি এখানে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন।
সদস্য সমূহ-
হিন্দু মেলা সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য সদস্যগণ ছিলেন রাজনারায়ণ বসু, গিরিশচন্দ্র ঘােষ, পিয়ারিচরণ সরকার , রমানাথ ঠাকুর, প্রমুখ
বসু মন্দির টিকা লেখো ?
উত্তর ভূমিকাঃ- 1917 খ্রিস্টাব্দে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রধানত, জীব এবং জড় বস্তুগুলির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি 'বােস ইন্সটিটিউট নামেও পরিচিত ছিল।
প্রতিষ্ঠা 1915 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে 1917 খ্রিস্টাব্দে বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট শাখায় মৌলিক গবেষণা করার জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠ্যবিষয়ঃ- এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ছাড়াও মাইক্রোবায়ােলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিদ্যা, অ্যানিম্যাল ফিজিয়ােলজি, বায়ােইনফরমেটিক্স প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণার সুযােগ আছে। এমনকি এখানে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনা করা এবং গবেষণা করা যায়। অবদান ও বসুবিজ্ঞান ।অবদান ও বসুবিজ্ঞান মন্দির বিভিন্ন বিষয়ে তার অবদান রাখে ।যে টিকা আবিষ্কারে কিংবা উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তা ছাড়া আধুনিক সলিকিউলার বায়ােলজির সূচনা হয় এখানে।
আয়ােনােসিটাল ফসফেট চক্রের আবিষ্কার এখানেই ঘটেছিল। জগদীশচন্দ্র বসুর বহু পাণডুলিপি ও মিউজিয়াম এখানে রয়েছে। এখানকার কুতী গবেষকেরা এখান থেকে এস, এস, ভাটনগর পুরস্কার, হােমি জাহাসির ভারা ফেলােশিপ প্রভূতি পেয়ে থাকেন। আর্থিক সাহায্য ও প্রাথমিক পর্বে জগদীশচন্দ্র বসু তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তােলেন। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রতিষ্ঠানকে 30 কোটি টাকার তহবিল দান করা হয়।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার টিকা লেখো ?
উত্তর
প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা আন্দোলনে অক্ষয় মেদিনীপুর জেলার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক, মহিষাদল, সুতাহাটা। ১৯৪২ সালে ।ব্রিটিশদের নির্যাতন তখন তুঙ্গে। মহিষাদল থানার অন্তর্গত বেশ কয়েকটি গ্রামে ছােট শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই বাদ যেত না শাসকের অত্যাচার থেকে। সেই সময়ে মহিষাদলের মাশুড়িয়া, চণ্ডীপুর-সহ কয়েকটি গ্রামে ৪৬ জন মহিলার সম্মানহানি করে ব্রিটিশ সেনারা।
মুহাম্মদ গাঁথি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলে তমলুকের মাতঙ্গিনী হাজরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ লেন। মেদিনীপুরে মাতঙ্গিনী হাজরা ও রামচন্দ্র বেরার নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নানাদিক থেকে এসে তমলুক থানা ও আদালত অবরোধ করেন। ৭৩ বছর বয়স্কা কৃষণকবধু মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক আদালতের উপরে ভারতের ত্রি-রঞ্জিত পতাকা তুলতে গিয়ে ব্রিটিশের গুলিতে প্রাণ হারান।
সরকার গঠনঃ- এসব ঘটনার মধ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্ত নেতৃত্ব নারকেলদহ গ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী এক গােপন বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই ইংরেজদের শাসন অস্বীকার করে নতুন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয় ।১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। সর্বাধিনায়ক হন বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। এই সরকারের বিভিন্ন বাহিনী গঠিত হয়। এই জাতীয় সরকার সে সময় পৃথক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। আইন- শুজ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রচার, সার ইত্যাদি বিভাগে পৃথক পৃথক সচিব নিয়ােগ করা হয়েছিল। সবার উপরে ছিলেন সর্বাধিনায়ক বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। অর্থসচিব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় এবং সমর ও স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন সুশীল কুমার ধাড়া। ১৯৪৪ সালে ৩০ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অস্তিত্ব।
সাফল্য -সতীশচন্দ্র সামন্ত দীর্ঘ ২১মাস এই সরকার বৃটিশ সরকার অচল করে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিল আজকের তমলুক ও হলদিয়া মহকুমা এলাকাজুড়ে। বৃটিশ ভারতে মহারাষ্ট্রের সাতার, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া ও তমলুকে তিনটি জাতীয় সরকার তৈরি হয়েছিল। এদের মধ্যে তমলুকেই প্রতিরােধ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল এবং এখানেই সরকার টিকেছিল বেশি দিন। অসংখ্য মহিলা সেদিন নির্যাতিতা হয়েছিলেন। শুধু তমলুক মহকুমায় শহিদ হয়েছেন ৪৮ জন। প্রায় সমসংখ্যক শহিদ হন কাঁথি মহকুমায়। সাধারণ মানুষের উপর বৃটিশের অত্যাচারের সীমা ছিল না। সে সময়ে গান্জীজি জুটে এসেছিলেন মহিষাদলে এবং পাঁচদিন ছিলেন।
(২) প্রঃ-ভারত মাতার চিত্র-জাতীয়তাবাদের কিভাবে উন্মেষ ঘটায়।
উত্তর :
ভূমিকাঃ- ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে চিত্রশিল্পীগণ চিত্রের মাধ্যমেও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ফুটিয়ে তােলেন। ভারতীয় জাতীয়তা বােধ সুষ্টিকারী চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙিত ভারতমাতা চিত্রটি। জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতা চিত্রের মাধ্যমে বিশ শতকে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটান। চিত্রে 'ভারতমাতা হলেন ভারতবর্ষের প্রতীক।
ভারতমাতার চিত্রকর-ভারতমাতা' চিত্রের চিত্রকর হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ভারতমাতার
অলঙ্কলঃ- 1902 খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বঙ্গমাতা চিত্র অঙ্কন করেন। পরে ভারতের স্বদেশী। আন্দোলনের আবহে 1905 খ্রিষ্টাব্দে তা ভারতমাতা রুপে খ্যাতি লাভ করে।
সৃষ্টি ও স্রষ্টা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভবো ভারতমাতা খ্রিস্টাব্দে ভারতমাতা রূপে খ্যাতি লাভ করে।
ভারতমাতার চিত্রের বর্ণনাঃ- ভারতমাতা হলেন গৈরিক বসন পরিহিতা এক দেবী। ভারতমাতার চারটি হাত। তিনি চারটি হাতে ধরে আছেন ধানের গােছা, সাদা কাপড়, বেদ ও জপমালা। তিনি সঞ্জ পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে আছেন, তার পায়ের কাছে চারটি পদ্মফুল এবং পিছনে নীল আকাশ।।
উপসংহারঃ
ভারতমাতা ভারতবর্ষের প্রতীক। তিনি তার সন্তানদের অন্ন, ব, শিক্ষা ও দীক্ষা প্রদান করেন। ভারতমাতা চিত্রটি ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনকালে জাতীয়তাবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে ভারত মাতা চিত্রটি জনসাধারণের মধ্যে। জাতীয়তাবােধের সঞ্চার করে।
(3) ছাপাখানার বিস্তার ও শিক্ষার প্রসারের সম্পর্ক সমানুপাতিক - উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগে বাংলার শিক্ষা বিস্তার প্রসঙ্গে উক্তিটির ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর:-
ভূমিকা :- অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপের খ্রিষ্টান মিশোনারীদের মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলার শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই ছাপাখানা গুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ।
প্রেক্ষাপট:- বঙ্গদেশ আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠিতার আগে হতে লেখা বইপত্রের দ্বারা শিক্ষাগ্রহণের কাজ চলত , এই বইয়ের মূল্য খুব বেশি হতো বলে এইসময় নিম্নবিত্ত দরিদ্র সমাজে শিক্ষার প্রসারে বিশেষ সুযোগ ছিল না তাই এই সময়ে সমাজের অর্থাৎ ছাপা বইপত্রের বাজারে আসার আগে বাংলার শিক্ষার প্রসার ছিল খুবই সীমাবদ্ধ ।
ছাপা বইয়ের বাজার :- উনিশবিংশ শতকের শুরু থেকে ছাপাখানা ছাপাই প্রচুর সংখ্যক বই পত্র আসতে শুরু করল । একদিকে বইয়ের যোগান ছিল বিপুল অন্যদিকে এগুলো দামেও ছিল সস্তা । ফলে দরিদ্র অসাধারণ শিক্ষার্থী ও পাঠকের হাতে অতি সহজে ছাপাখানার ছাপা বইপত্র পৌঁছে যায়, ফলে বাংলার প্রচুর শিক্ষাবিস্তার শুরু হয় ।
পাঠ্য পুস্তকের সরবরাহ :- ছাপাখানা গুলি মুদ্রিত বইপত্র বিনামূল্যে সমস্ত ছাত্র ছাত্রী দের হতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় , ফলে শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যেসব সাধারণ মানুষ বিদ্যা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলো তাদের হাতে ছাপাখানার মুদ্রিত পাঠ্য বই পৌঁছে যায় ।
উপসংহার :- পরিশেষে বলা যায় যে মুদ্রণ বিপ্লব এর ফলে শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসার ও ঘটে বাংলার মুদ্রণ বিপ্লব এর ফলে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন সম্ভব হয় এইভাবে ছাপাখানার বিস্তার ও শিক্ষার বিস্তার সমান্তরালভাবে চলতে থাকে ।
(৪) একটি ভারতের মানচিত্রে প্রদত্ত স্থানগুলি চিহ্নিত করাে — মিরাট, এলাহাবাদ, ব্যারাকপুর, দিল্লি, ঝাঁসি, শ্রীরামপুর, বোলপুর ?
উত্তর :-

