দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশন । দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা। তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র । একটি শিক্ষামূলক ভ্রমন । শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি প্রবন্ধ রচনা।

দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশন । রচনা। তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র প্রবন্ধ। একটি শিক্ষামূলক ভ্রমন প্রবন্ধ। শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি প্র
আজকে আমরা আলোচনা করব দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা প্রশ্ন উত্তর সাজেশন নিয়ে এই প্রশ্নগুলি আগামী  দিনের পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । part 2


দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশন । দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা। তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র । একটি শিক্ষামূলক ভ্রমন । শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি প্রবন্ধ রচনা।


দশম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা


1. তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র

উত্তর - ভূমিকা :- আমি বই পড়তে যেমন ভালােবাসি, সিনেমা দেখতেও তেমনই ভালােবাসি। দুটোই আমার অবকাশের আকাশ ভরিয়ে রাখে। কিন্তু সব বই যেমন মনে দাগ কাটে না, তেমনই ছায়াছবি দেখলেই যে মন ভরে যায়, তা নয়। বরং বেশিরভাগ সময়েই, প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে আসার পর আর সিনেমাটার কথা মনে থাকে না। কিছুকিছু সংলাপ হয়তাে মনে থাকে, নায়ক-নায়িকার কথাও হয়তাে স্মৃতিকোশে জায়গা করে নেয়। কিন্তু গােটা ছবিটা মনে আছে, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। কিন্তু ইদানীং এমন একটা সিমেনা দেখেছি যা এই পঙক্তিভুক্ত নয়। ছবির নাম চাদের পাহাড়'। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে কমলেশ্বর মুখােপাধ্যায় পরিচালিত একটা দুর্দান্ত সিনেমা।

কাহিনি:- চাদের পাহাড় আমার প্রিয় উপন্যাসগুলাের মধ্যে অন্যতম। বিভূতিভূষণের এই কাহিনি সুদূর আফ্রিকার পটভূমিকায়। সেখানকার প্রকৃতির আদিম সৌন্দর্য, হিংস্র জন্তু জানােয়ার, পদে-পদে বিপদ আর তারমধ্যে এই বাংলারই গ্রাম থেকে যাওয়া একজন ছেলে, শংকর—সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্নালু অথচ রােমাঞ্চকর পরিবেশ রচনা করে। চাদের পাহাড়'-এর মূল আকর্ষণ ওটাই। অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে একজন বঙ্গসন্তানের অ্যাডভেঞ্চার পুরাে কাহিনিটাকে এক অন্য মাত্রা দেয়। সেজন্যই আমি বারবার চাদের পাহাড় পড়ি আর নিজেকে শংকর হিসেবে দেখি।

চলচ্চিত্রায়ণ : উপন্যাসের এই জাদু বিন্দুগুলােই সিনেমার পর্দায় তুলে এনেছেন পরিচালক কমলেশ্বর। আমার কল্পনার জগৎটাকেই আমি চোখের সামনে তার যাবতীয় রং রূপ নিয়ে হাজির হতে দেখি। এতটুকু অবাস্তবতা নেই, নেই কৃত্রিমতা। একেবারে আফ্রিকায় শুটিং হয়েছে এই ছবির। ব্যবহার করা হয়েছে সিংহ, সাপ, জেব্রা এবং হাতি-একেবারে সত্যিকারের। কম্পিউটার গ্রাফিক্‌সের কোনাে কারসাজি সেখানে নেই। আবার আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদ্‌গিরণের দৃশ্য আর বুনিপকে দেখাতে কম্পিউটার গ্রাফিকৃসেরই সাহায্য নিয়েছেন পরিচালক। আসল প্রাণী, জীবন্ত প্রেক্ষাপঠ আর। । কম্পিউটারের কৌশলী উপস্থাপনা-সব মিলিয়ে সিনেমার পর্দার । 'চাদের পাহাড় একেবারে টানটান। চোখ সরাবার জো থাকে না। এতটুকু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অভিভূত হয়ে দেখতে হয়। বইটা। পড়ার সময় যে রোমাঞ্চ অনুভব করি, সিনেমাটা দেখার সময় একই অভিজ্ঞতা আমার। সিনেমার বুনিপ তাে আমার কল্পনার। বুনিপকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সেজন্যই এই ছবিটি আমার মনে এত গভীর রেখাপাত করেছে।

অভিনয়: 'চাদের পাহাড়' ছবিটির আর-একটি আকর্ষণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দুর্দান্ত অভিনয়। শংকরের ভূমিকায় টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক দেব অসাধারণ অভিনয় করেছেন। সিংহ মারার পর তাঁর রক্তম্নানের দৃশ্য এবং কালাহারির মরু অস্কুলে প্রতিকূল প্রকৃতির মধ্যে একক মানুষ হিসেবে তাঁর তীব্র লড়াইয়ের দৃশ্য, আমি আজও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই। মনে রাখার মতাে অভিনয় করেছেন গেরার্ড রুডলফ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অভিনেতা আলভারেজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বইয়ের পাতায় শংকর-আলভারেজের জুড়ির মতােই পর্দায় দেব ও রুডল্‌ফ পরস্পরকে যােগ্য সঙ্গত করেছেন। তিব্লুমলের ভূমিকায় নবীল খানের অভিনয়ও মনে রাখার মতো। মানুষের পাশাপাশি আফ্রিকার সিংহ, বিষাক্ত ব্ল্যাক মাম্বা আর । হাতিও দুর্দান্ত অভিনয় করে পুরাে ছবিটাকে জমিয়ে দিয়েছে। প্রেক্ষাগৃহের পর্দা সরতেই ইগলের উড়ান আর তারপর হাতির। দৌড়, আমাকে মুগ্ধ করেছে।


2. একটি শিক্ষামূলক ভ্রমন

উত্তর - ভূমিকা : ভ্রমণ মানে অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় বন্ধুদের সঙ্গে, পাশে থাকে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সাহচর্য তাহলে তাে কথাই নেই! কিছুদিন আগে আমার এরকমই একটা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে দিন কয়েকের জন্য মুর্শিদাবাদ ঘুরে এলাম।

যাত্রা শুরু : ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি লালগােলা এক্সপ্রেস ধরব বলে আমরা সকলে স্টেশনে জড়াে হলাম। আমরা মানে ক্লাস নাইনের তেতাল্লিশ জন ছাত্র, তিনজন স্যার আর ট্যুর অপারেটরের লােকজন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে পাখি যেন উড়তে শিখেছে। বাবা-মায়ের মুখগুলাে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল যেন ছেলেরা অনেকদিনের জন্য অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক ১০.৩০ মিনিটে আমাদের ট্রেন চলতে শুরু

অতঃপর মুর্শিদাবাদ:- আমরা নির্ধারিত সময়ে মুর্শিদাবাদ পৌঁছােলাম । হােটেলের ঘরে আমার তিন সঙ্গী হল আকাশ, সৌম্য আর সায়ন। ব্যাগপত্তর রেখে তিনজনে ঘরের মধ্যে খানিক দুটোপাটি করে নেমে এলাম হােটেলের লনে। বাবা-মার শাসনহীন এক মুক্ত জীবনের উল্লাস যেন পেয়ে বসেছে। ২৮ জানুয়ারি সকালে আমরা গেলাম হাজারদুয়ারি, মিউজিয়াম প্যালেস। নবাবি আমলের অজস্র জিনিস মুধ হয়ে দেখলাম। এরপর পেলাম ইমামবড়া আর ঘড়িঘর দেখতে ঘড়িটা অবশ্য অচল হয়ে আছে। সিরাজ-উদদৌলার নিজের হাতে তৈরি মদিনা এবং কামানও দেখলাম। অদূরে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা তার তীরে সিরাজের। সমাধি। এই গঙ্গা যেন সেই ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষী পরদিন। গেলাম কাটরা মসজিদ | এই মসজিদেই রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খার সমাধি। সেখান থেকে গেলাম জাহানকোষার তােপখানা দেখতে। সুজিত স্যার আমাদের বললেন, "জাহানকোষা' কথাটির অর্থ বিশ্ববিধ্বংসী। সেখান থেকে মতিঝিল। বিশাল অর্ধচন্দ্রাকৃতি ঝিলের পাশে এক অতি প্রাচীন মসজিদ যেন তার রহস্যময়তা নিয়ে আমাদের আহবান করছিল। মুরশিদাবাদ ভ্রমণের শেষদিনে আমরা গিয়েছিলাম কাঠগােলা বাগান দেখতে। এটি একটি জৈন মন্দির। পুকুর-গাছপালা দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরে মাইকেল এঞ্জেলাের একটি মর্মর মূর্তি রয়েছে। এরপর নূরপুরে গেলাম রেশমচাষ দেখতে। মুরশিদাবাদের স্মারক হিসেবে দুএকটা রেশমগুটিও সংগ্রহ করে নিলাম।

অন্যকথা:- দেখলাম অনেক, জানলাম অনেক না-জানা বিষয় আর তার সঙ্গেই অনুভব করলাম জীবনের এক অচেনা দিক এতজন বন্ধু একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, থাকা, ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু দেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এসব সারা জীবনের সঞয়। স্যারেদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর সম্পর্কটা যেন অনেক সহজ মনে হতে লাগল। সুজিত স্যারের মজা করা, প্রদীপ স্যারের আবৃত্তি—স্যারেদের এভাবে ক্লাসরুমে তাে পাই না। তাই ফেরার সময় অনিবার্য মন খারাপ। ট্রেনে ওঠার পর থেকে অনেকদিন। পর্যন্ত তা ছিল। হয়তাে এই মন খারাপই আরও মধুর করে রাখে। মুরশিদাবাদের স্মৃতি।


3. শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি

উত্তর - ভূমিকা:- মানুষের জীবন এক বিরামহীন এগিয়ে চলা। নতুন ঘটনা, নতুন অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনার বাকে বাঁকে যে জীবন নিজেকে সম্পন্ন করে। আজকের বর্তমান কাল হয়ে যায় অতীত। তবুও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত মানুষ নিজস্ব নির্জন মুহূর্তে দাড়িয়ে পিছন ফিরে তাকায়; শুশুষার প্রলেপ খোঁজে আদরের অতীত থেকে।

আমার শৈশব:- আমার শৈশব কেটেছে ইছামতি নদীর ধারে এক মফস্সল শহরে। জায়গাটার নাম টাকি। উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট মহাকুমার অন্তর্গত এই জায়গাটা অত্যন্ত বনেদি। অনেকগুলাে জমিদারবাড়ি, স্কুল কলেজ লাইব্রেরি নিয়ে টাকি একটা সমৃদ্ধ অঞ্চল। আবার খুব কাছেই ধানক্ষেত, ইতিউতি পুকুর-ডোবা, আর ছিল সরল-সহজ মানুষজন। এখানকারই টাকি সরকারি স্কুলে কেটেছে আমার শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব।

শৈশবের স্মৃতি :- আমার শৈশব মানে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে ঠাকুমার কাছে গল্প শােনা । বয়সের ভারে নুয়ে পড়া টুকটুকে ফরসা আমার ঠাকুমাই আমাকে শুনিয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশাের, ঠাকুমার ঝুলি’, 'ক্ষীরের পুতুল। সেই অবুঝ বেলাতেও আলি পার করে দেওয়া এক বৃদ্ধ আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্বপ্নকল্পনার জগতে। সন্ধে হলে মার কাছে দোতলার ঘরে পড়তে বসতাম। সম্ভার কাগজে ছাপা ধারাপাত', বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা গােলাপি কাগজে মােড়ানাে বর্ণপরিচয়'। আজও সেসব বইয়ের কথা মনে পড়ে। গরমকালে জানলা দিয়ে হাওয়া আসত, আর সঙ্গে হাসনুহানার গন্ধ| বাবা সন্ধে বেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে টিভি তে খবর দেখতেন। আমার টিভি দেখা বারণ ছিল। শুধু ছােটোদের সিনেমা হলে ডাক পড়ত। আজ শহর কলকাতার ধোয়া-কালি মাখা দিনগুলােয় হারিয়ে গেছে শৈশবের হাসনুহানা।।

আমার স্কুল:- প্রথম যেদিন ফুলে ভরতি হতে গেলাম, কাদতে । কাদতে বলেছিলাম, "মা না এলে কিছুই বলব না।” যিনি প্রশ্ন করেছিলেন সেই হৃষীকেশ স্যার, বাবা বলেন, আমাকে কোলে । তুলে নিয়েছিলেন। রিকশায় করে ছােটোবেলার বন্ধু জাহাঙ্গিরের সঙ্গে স্কুলে আসা। সেদিনের হৃষীকেশ স্যার, সনাতন স্যার, বাদল স্যার মনে আছে সকলের কথা। মনে আছে স্কুলের গাছ থেকে জামরুল পাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা, পড়ে গিয়ে কপাল ফাটার মতাে কত ঘটনা| বইয়ের অক্ষর ছাপিয়ে সে ছিল আমার সবুজ স্কুল।

স্মৃতি সতত সুখের:- এক ছুটে খেলার মাঠ, কিছুই খেলতে না শেখা দিনগুলােতে সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি কিংবা হাঁটুজলে দাপাদাপি, বাবার বেদম মার—যন্ত্রণার স্মৃতি ভুলে আজ সবই মধুর। কলকাতা শহরের ফ্ল্যাটবাড়িতে এখন আমি থাকি। স্কুল বাসে যাতায়াত করি। আমার শৈশব আজ আমার কাছে যেন বিগত গল্পের স্মৃতি। গরমকালে দুপুরবেলা লুকিয়ে আম কুড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা—মনে পড়ে সব। সেদিনের বৃষ্টিতে আজও মনে মনে ভিজে যাই আমি।

উপসংহার :- মাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রা্স, আইআইটি আমার মগজজুড়ে আজ ঝা চকচকে আধুনিক জীবন কিন্তু হৃদয়ে আমার আজও নদীর ধার, সবুজ ধানক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে বহুদূরের ট্রেন যেতে দেখা, দেওয়ালের গায়ে রং-পেন্সিলের দাগ, চাদের বুড়ি, আমার বুড়ি ঠাকুমা...। আমার জীবন্ত শৈশব তাই বিবর্ণ শহরে বহুদূর থেকে ভেসে আসা সবুজের হাতছানি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন